by Drtv News
May 11th 2020.

প্রায়ই অনেক রাতে রুপা একাকী এসে দাঁড়ায় ছবিটার কাছে।তার মা ঘুমিয়ে থাকে পাশের রুমে। ঘড়িতে ঢং ঢং শব্দ হয়,সামনে এল,এল,বি ফাইনাল পরিক্ষা তাই রাত জেগে তাকে পড়তে হয়। বাবার ছবিতে হাত রাখে আর ভাবে যদি কোন অলৌকিক উপায়ে ছবির ভিতরে থাকা মানুষটা বের হয়ে তার হাত ধরতো। মেয়েটা জন্ম থেকেই জেনেছে বাবা মানেই দেয়ালের এই ছবি।ছবিটা হাসি,কান্না,আনন ্দ,উল্লাস,বিষাদ কোন কিছুতে সাড়া দেয় না,তবুও সে তার সব কথা তার বাবাকে বলে,যেন তার বাবা কথা বলতে না পারলেও শুনতে পারে। , দেয়ালের উল্টোদিকে একটা কাঠের আলমারি,একটা হাতল ওয়ালা সেগুন কাঠের চেয়ার,সেখানে বসে তার বাবা বই পড়তেন আর লিখতেন। আসবাবপত্রগুলো ঘুনে ধরে গেছে,অল্প নড়াচড়াতে ই ঘুন পড়তে থাকে।লেখার সেই টেবিলটা এখন নেয়,তবুও মানুষটার স্মৃতি একটুকুও কমেনি। রুপা প্রায়ই বইগুলো পড়ে।আজ তার বাবা থাকলে খুশি হতেন কারণ তার মেয়েও তার মতো বইয়ের পোকা। , মার কাছ থেকে শুনেছে তার বাবা বেতনের টাকাই অন্তত একটা বই কিনে হলেও বাড়ি ফিরতেন,অনেক রাত অব্দি জেগে বই পড়তেন,। রুপার জন্মের পর যখন খরচ বাড়তে থাকে তখন রুপার মা রাহেলা খাতুন খুব বিরক্ত হতেন রুপার বাবার বই কিনার জন্য,আর রুপার বাবা মুচকি হেসে বলতেন,"বিপদে আল্লাহকে ডাক,তিনি কোন না কোন উপায় ঠিক বের করবেন,।শত বিপদের মধে বইপত্র মনে আনন্দ দেয়, ।" , আল্লাহ ঠিকই উপায় বের করে দিয়েছিলেন। রুপার এক বছর বয়সে তার বাবা মারা গেলে রুপার মা চরম বিপদে পড়ে যান,ছোট মেয়েটাকে নিয়ে রাহেলা খাতুন রাস্তায় নামেন,সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না তখন। ভাগ্যক্রমে এমনই একদিনে রাহেলা খাতুনের সাথে দেখা হয় তার পুরনো বান্ধবী শামসুন্নাহারের সাথে। শামসুন্নাহারের নিজের বাড়ি ছিল মেডিকেল স্টাফ কোয়াটারের গলিতে। তার। স্বামী সেখানের এক প্রাইমারী স্কুলের হেডমাস্টারকে বলে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন রাহেলা খাতুনকে। সেই থেকে বিধবা রাহেলা খাতুন রুপাকে নিয়ে স্টাফ কোয়াটারের গলিতে থাকে। , নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে মেয়ে দ্রুত বুঝতে শিখে। চাইলেই রাহেলা তার মেয়ের জন্য অন্যসব মেয়েদের মতো নতুন জামা কিনে দিতে পারতো না। স্কুলের পোশাক ছাড়া উৎসবে যাওয়ার মতো দুই একটা পোশাক থাকতো রুপার। ঈদের সময় মা কিনে দিতো একটা জামা আর একজোড়া জুতা। যদি তার মা কখনো চুলের ক্লিপ বা পাথরের কানের টব কিনে দিতো রুপা তাতেই এতো খুশি হতো যে পুরনো সাজার আয়নায় ঘন্টার পর ঘন্টা নিজেকে দেখতো। , ২। রুপার ঘরে একটা ডেস্ক ছিল ভাঙা আর নড়বড়ে। কাঠে ফাটল ধরা। এটা দিয়েই রুপা স্কুল,কলেজ পাড় করেছে।স্কুলের ফাইনাল পরিক্ষার সময় রাহেলা খাতুন আশপাশ থেকে রুপার জন্য পুরান বই চেয়ে আনতেন। মেয়েকে প্রাইভেটটিউটর রেখে পড়ানোর সামর্থ্য তার ছিল না। আশেপাশের মানুষ থেকে রুপা মাঝে মাঝে পড়া বুঝে আসতো। এভাবেই পড়াশোনা করতে হয়েছে রুপাকে। , নাস্তায় সুজি,রুটি আর বাকি দুবেলা নিরামিষ,ডাল,সাদা ভাত ছিল রুপার নিয়মিত খাবার। কখনো বাইরে এটা ওটা কেনার প্রয়োজন হলে রুপা নিজ থেকে পয়সা চায়তো না,চায়তে তার লজ্জা লাগতো কারণ সে নিজেও জানে তার মা পুরনো কাপড় গোপনে সেলাই করে, মাড় দিয়ে ঘুরিয়ে পেচিয়ে পড়ে। , তারপরও রুপার জীবনে অনেক সুখের ঘটনা আছে। রুপা স্কুলে পড়ার সময় সব ধরনের সাংস্কৃতিক কাজের সাথে জড়িত ছিল। বিশেষ করে ও ছিল নাটকে পারদর্শী। আবৃত্তিও করতো ভাল। লিখালিখির জন্যে তার বেশ নামও ছিল। স্কুল, কলেজের সকলের ভালবাসা ই রুপাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। , রুপা ছিল খুব চাপা স্বভাবের। বাইরে থেকে কেউ কখনো তাকে বুঝতে পারতো না কারণ তার মুখ ভরতি ছিল ভুবন ভুলানো হাসি। তবুও যখন খুব কষ্ট হতো তখন বাবার ছবির সাথে কথা বলতো। , রুপার মা আজ ইদানীং বিছানায় পড়ে থাকে। রুপাকে নিয়ে তার খুব টেনশন, রুপাকে ডেকে একটা কথাই বলে,"আমি যদি তোকে ছেড়ে চলে যাই তাহলে তোর কি হবে??" রুপা ভয় পেলেও মার কাছে গোপন করে বলে,"তোমার কিছু আমি হতে দিব না,আমি চাকুরী করব,তোমার চিকিৎসা করানো হবে,তুমি ভাল হয়ে যাবে।" , রুপাও হন্যে হয়ে চাকুরী খুঁজছে কয়েক জায়গাতে ইন্টার্ভিউও দিয়েছে সে। বেসরকারি কোন চাকুরী করার ইচ্ছা তার নেই,তবুও এল.এল.বি পাশের জন্যে অনেক টাকা প্রয়োজন এবং মায়ের চিকিৎসার জন্যেও টাকা দরকার।,তাই সে যেকোন চাকুরীর সন্ধান করছে। , , আজকে বাড়িতে ফেরা মাত্র একটা সুখবর পেল রুপা। একটা ইন্টার্ভিউ এর ডাক এসেছে। এরকম সাধারণত হয় না তারা যেভাবে লিখেছে চাকুরীটা প্রায় নিশ্চিতই। ইন্টার্ভিউ এর পূর্বেই বেতন সহ জানিয়ে দিয়েছিল। চাকুরীটা রুপার দরকার তার মায়ের চিকিৎসার জন্যে হলরুপা এতটাই উত্তেজিত ছিল যে খামটা খুলেও দেখল না,,, হয়তো আল্লাহ মুখ তুলে তাকিয়েছে,,,, হয়তো তাদের কষ্টের অবসান হতে চলেছে,,,,,,

View more on Facebook

Search Website

Search

Subscribe

Newsletter

WhatsApp Google Map

Safety and Abuse Reporting

Thanks for being awesome!

We appreciate you contacting us. Our support will get back in touch with you soon!

Have a great day!

Are you sure you want to report abuse against this website?

Please note that your query will be processed only if we find it relevant. Rest all requests will be ignored. If you need help with the website, please login to your dashboard and connect to support