by Drtv News
May 13th 2020.

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের বাঁচাতে অগ্রগামী ডাক্তারকে অনুপ্রাণিত করেছে তাঁর পরিবার

আমার বাচ্চারা আমাকে করোনাভাইরাসকে বাংলাদেশে থেকে তাড়িয়ে দিতে বলেছে যাতে তারা আবার আমার কাছে আসতে পারে, বাইরে যেতে পারে ও খেলতে পারে


করোনাভাইরাস রোগীর স্বাস্থ্যসেবা
UNICEF Bangladesh/2020/Bas

কুয়েত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সরকারী হাসপাতালে (কেবিএফজিএইচ) প্রথম কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সময় ৪২ বছর বয়সী ডাঃ মুহম্মদ আসাদুজ্জামান যেসব বিপদের সম্মুখীন হতে যাচ্ছিলেন তা তার পরিবারই প্রথম অনুধাবন করেছিল।

তাঁর অনুপ্রেরণার উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্রিটিকাল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বলেন, “আমি আমার মায়ের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছি”।

তিনি আরও জানান, “বিপদের বিষয়টি জানা সত্ত্বেও তিনি আমাকে কাজটি করতে উৎসাহিত করেছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, আমি একজন ডাক্তার ও তার সন্তান এবং আমার ভয় পাওয়া উচিত হবে না। কারন আমি বিশেষ প্রয়োজনের সময় মানুষের সেবা করছি এবং আল্লাহ আমাকে দেখবেন।”

কেবিএফজিএইচের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)-এর বর্তমান প্রধান এই চিকিৎসক জানান, করোনার কোনও রোগী যদি তার বাবা, মা, ভাই বা বোন হতেন তবে তিনি কি করতেন-নিজেকে এমন একটি জিজ্ঞাসাই ছিল তার চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করার আরেকটি কারণ।

 

ইউনিসেফের সহায়তা-পুষ্ট নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র

ডাঃ আসাদুজ্জামান জানান, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তার স্ত্রী, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ চৌধুরী তসলিমা নাসরিন, এবং দুই সন্তানের ভূমিকাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারন তাদের সহযোগিতা না পেলে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করা তার পক্ষে সম্ভব হতো না।

তবে মার্চ মাসের প্রথমদিকে যখন কেবিএফজিএইচে বাংলাদেশের প্রথম কোভিড-১৯ রোগী ভর্তি হয়েছিল তখন থেকেই তিনি তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেছিলেন এবং  তার কাজের এরকম চরিত্রের কারনেই তাকে তাঁর পরিবার থেকে শারীরিকভাবে দূরে থাকার মতো ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে।

ডাঃ আসাদুজ্জামান
UNICEF Bangladesh/2020/Mamum
যেসব চিকিৎসক প্রথমদিকে স্বেচ্ছায় করোনভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছিলেন ডাঃ আসাদুজ্জামান তাদের অন্যতম।

তিনি বলেন, “আমার সন্তানরা আমার কাছে আসার জন্য বেশ আগ্রহী। কিন্তু আমি তাদেরকে আমার কাছে আসতে দিই না। কারন আমার অবশ্যই নিজে থেকে দূরে থাকা উচিত।” তিনি আরও বলেন, “তারা আমাকে করোনাভাইরাসকে বাংলাদেশ থেকে বাইরে তাড়িয়ে দিতে বলে (যাতে করে তারা আমাকে দেখতে পাবে)। কারণ তখন তারা বাইরে যেতে এবং খেলতে পারবে।”

বাংলাদেশে করোনভাইরাস প্রস্তুতি পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ভেন্টিলেটর, ডায়ালাইসিস মেশিন এবং অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাসহ একটি আইসিইউ স্থাপন করতে ডাঃ আসাদুজ্জামান ফেব্রুয়ারিতে কেবিএফজিএইচে এসেছিলেন।

দেশে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত প্রথম হাসপাতাল হলো কেবিএফজিএইচ। এখানকার বেশিরভাগ সরঞ্জামাদি ইউনিসেফ দিয়েছিল। কোভিড-১৯ মহামারীর শুরু থেকেই এই হাসপাতালটি বাংলাদেশ সরকারকে সহাযোগিতা করে আসছে। 

এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় নির্ধারিত সরকারী হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ইউনিসেফ বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করছে। এই সরঞ্জামাদির প্রথম চালানের মধ্যে ছিল ১৪টি ভেন্টিলেটর, ২৪টি রেস্পিরেটর, ৫৭টি পাল্স্ অক্সিমিটার এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশুদের জন্য ১২টি ল্যারিঞ্জস্কোপ সেট।  

 

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের স্বেচ্ছায় চিকিৎসাসেবা দিতে এগিয়ে এসেছেন

করোনায় আক্রান্ত রোগীদের স্বেচ্ছায় চিকিৎসাসেবা দিতে যেসব চিকিৎসক এগিয়ে এসেছিলেন ডাঃ আসাদুজ্জামান ছিলেন তাঁদের প্রথম সারির একজন। এমন এক সময়ে তিনি এগিয়ে এসেছিলেন যখন ভাইরাসটির চিকিৎসা করার বিষয়ে সহকর্মীদের মধ্যে ভয় ছিল।

ডাঃ আসাদুজ্জামান জানান, “অন্য দুইজন চিকিৎসককে সাথে নিয়ে আমি ১১ মার্চ কোভিড-১৯ আক্রান্ত প্রথম রোগীকে চিকিৎসা করি।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে এবং একের পর এক রোগীদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসা অন্য সহকর্মীদের কাছে এটি ছিল একটা বিশাল মুহূর্ত।” 

তবে ডাঃ আসাদুজ্জামানের জন্য এটি এক বিপরীতধর্মী অভিজ্ঞতাও বটে। তিনি একদিকে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে তার সহকর্মীদের মৃত্যুবরণ করতে দেখছেন, অন্যদিকে নতুন আইসিইউ’র সুবিধার কারনে কিডনী জটিলতা ও হূদরোগসহ অসংখ্য রোগীকে জটিল পরিস্থিতি থেকে সেরে উঠতেও দেখছেন।  

শুধূ স্বাস্থ্যকর্মীরা এগিয়ে আসছেন এমনটিই নয়। একসময় করোনভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর জরুরীভিত্তিতে অতিরিক্ত ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হয়েছিল, কিন্তু আইসিইউর নতুন ডায়ালাইসিস মেশিনটি কিভাবে স্থাপন করতে হবে তা কেউ জানত না।

ডাঃ আসাদুজ্জামান জানান, “শেষ অবলম্বন হিসাবে ডিলাইসিস মেশিনটি স্থাপনকারী সেই বিক্রেতা সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারের সাহায্যের জন্য আমরা হাত বাড়ালাম।  এক্ষেত্রে তিনি তাঁর পেশাদারী দায়িত্বের বাইরে এসে একজন ভালো মানুষ হিসাবে আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন।”

রোগীটি এখন সুস্থ হয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে গেছেন।

৭ই মে পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন চিকিৎসক কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়েছেন এবং আরও ১০০০ জনের বেশি চিকিৎসক নিজ বাড়িতে বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন বলে জানা গেছে। ৭ই মে পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত মোট ১২,৪২৫ জনের মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য অংশ।

Search Website

Search

Subscribe

Newsletter

WhatsApp Google Map

Safety and Abuse Reporting

Thanks for being awesome!

We appreciate you contacting us. Our support will get back in touch with you soon!

Have a great day!

Are you sure you want to report abuse against this website?

Please note that your query will be processed only if we find it relevant. Rest all requests will be ignored. If you need help with the website, please login to your dashboard and connect to support